বিবাহ কথাটির অভিধানিক অর্থ পুরুষ ও নারীর স্বামী-স্ত্রী হিসাবে জীবনযাপন করার সামাজিক বিধি। পৃথিবীর সব দেশের, সব সমাজের, মুসলিম তথা সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সৃষ্টিলগ্ন থেকে এই সামাজিক প্রথা চলে এসেছে যা আজও বর্তমান।
বিয়ের পাত্র পাত্রী নির্বাচন নিঃসন্দেহে কঠিন থেকে কঠিনতম একটি কাজ। সারা জীবনের সাথে যাকে জড়ানো হবে তাকে নির্বাচন করাটা আর যাই হোক না কেন, সহজ ব্যাপার নয়। আমাদের দেশে যখন ছেলে মেয়েরা বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়, তখন থেকেই ভালো ছেলে বা মেয়ের জন্য তারা উন্মুখ হয়ে থাকেন। অনেক পরিবারে মেয়েদের জন্য ভালো পাত্রের সন্ধান অনেক আগে থেকেই শুরু হয়। ঘটক ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের দ্বারাও পাত্র-পাত্রী খুঁজে থাকেন অনেকে। বিয়ের আয়োজনের প্রথমেই আসে জীবনসঙ্গী নির্বাচন।
১. সততাই সুখের চাবিকাঠি
জীবনসঙ্গী হিসেবে পাশে দরকার একজন সৎ মানুষকে।যোগ্য জীবনসঙ্গী নির্বাচনে নারী পুরুষ উভয়েরই সততা ও বিশ্বস্ততার গুণটি রয়েছে কিনা দেখে নেয়া উচিত। কারণ একজন সৎ মানুষ নির্লোভ, স্বার্থহীন, ভালো মানুষ হন। এতে করে সংসারে আসবে সুখ ও সমৃদ্ধি। সততা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে আশ্বস্ত হতে পাত্র/পাত্রীর আশেপাশের মানুষ ও কর্মক্ষেত্রে খবর নিতে পারেন।
২. শিক্ষা- দীক্ষায় প্রাধান্য
শিক্ষার সঙ্গে জড়িত থাকে পাত্রের ক্যারিয়ার। এখানে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার একটা বিষয় থাকে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রাধান্য দিতেই হবে। আর একজন শিক্ষিত মা সন্তানকে সুশিক্ষিত করতে পারেন, সংসার ব্যবস্থাপনায় একজন শিক্ষিত নারী হয়ে থাকেন পারদর্শী। তাই পাত্রী নির্বাচনেও প্রাধান্য দিতে হবে শিক্ষার ক্ষেত্রটিতে। অনেক সময় দেখা যায় বেকার ছেলের কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না, বিশেষ করে প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি লক্ষণীয়। এমতঅবস্থায় অভিবাবকদের উচিত বিয়েতে বাধা প্রদান না করে ছেলেটি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার মত যথেষ্ট পরিপক্ক কিনা সেদিক বিবেচনা করা।
৩. বয়সের ব্যবধানে গুরুত্ব
আজকাল অনেকে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। সমবয়সি কিংবা পাত্রী বড়ও বিয়ে করে থাকেন। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পাত্রের পাত্রীর চাইতে ৩-৫ বছরের বয়সের পার্থক্য থাকা উচিত। কারণ সাইকোলজিস্টদের মতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ম্যচিউরিটি একটু দেরিতে আসে।
৪.ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কন্যাকে পাত্রস্থ করার সময় আমরা পাত্রের ক্যারিয়ারটার দিকেই নজর দিয়ে থাকি বেশি। বর্তমান ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ক্যারিয়ার ভিত্তিক চিন্তা ভাবনা, যোগ্যতা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতটাও দেখা উচিত। কারণ যে ছেলে বা মেয়েটি আজ সুপ্রতিষ্ঠিত নন নিজের যোগ্যতায় ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।
৫. দেহ ও মনের সুস্থতা
অনেকেই শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যের কারণে পাত্র/পাত্রী পছন্দ করে ফেলেন। কিন্তু বিয়ের আগে শারীরিক সুস্থতা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত দুপক্ষেরই। এর মানে এই নয় যে সাধারণ বিষয় ধরে বসে থাকা উচিত। পাত্র পাত্রী দুইজনকেই শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে তা না হলে পরবর্তীতে এর প্রভাব আপনার সাংসারিক জীবনেও পড়তে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে উভয়েরই প্রয়োজনীয় কিছু মেডিকেল টেস্ট করানো উচিত।
৬.আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব
একজন মানুষের কথা বার্তা এবং চাল চলনে অনেক কিছুই প্রকাশ পায়। পাত্র/পাত্রী নির্বাচনের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন পাত্র/পাত্রী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কিনা। কারণ সৌন্দর্য থাকলেও ব্যক্তিত্ব না থাকলে মানুষের সৌন্দর্য মলিন হয়ে যায়। বিয়ের আগে জীবনসঙ্গীর মানবিক মূল্যবোধ কতোটা ভালো তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। কারণ নিজের চাইতে ছোট এবং পজিশনের ছোট মানুষের প্রতি তার আচরণ খারাপ হলে তার মানসিক এবং মানবিক মূল্যবোধ না থাকারই কথা। তাই বিয়ের আগে খোঁজ নিতে হবে মানবিক মূল্যবোধের।
৭. রসবোধ ও হাসিখুশি মেজাজ
অনেকেই আছেন অনেক গম্ভীর মেজাজের হয়ে থাকেন কিন্তু তার মধ্যে কিছুটা হলেও রসবোধ থাকে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই একেবারে গম্ভীর তাদের সঙ্গে সংসার করা এবং সময় কাটানো বেশ কঠিন।